পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা তৈরির ইতিহাস

যেভাবে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা তৈরির পরিক্ষা

১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারতের একটি পারমাণবিক পরীক্ষার জবাবে পাকিস্তান তাদের প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে  পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। যা পাকিস্তানের আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক নিন্দা জন্ম দেয়।


পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষা প্রকল্পের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন তার নাম সামার মোবারক মান্দ। এবং তিনি ছিলেন পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক। ১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী এমন একটি বক্তব্য দিলেন  তা সারা বিশ্বকে অবাক করে তোলে। ১৪ বছর পর ভারত তাদের পরীক্ষা মূলক ভাবে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। 


এবং তাতে ভারতের প্রতি অন্য সকল দেশ নিন্দা প্রকাশ করে। তবে এতে সবার নজর ছিল প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের উপর। এর কারণ হলো দু'দেশের শত্রুতা। ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান দু দেশের স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই দুটি দেশ অনেকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এবং একে অপরকে মনে করে তারা চিরশত্রু। 

ভারত যখন পারমাণবিক  বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় বিশ্বের অন্য সকল রাষ্ট্রগুলো চিন্তা করল পাকিস্তান কিভাবে তাদের কে সামলাবে। তখনকার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেওয়াজ শরীফ। তিনি ব্যাপারটা সাধারণ ভাবেই নিয়েছিলেন। এবং তিনি সকলকে জানান আমরা দায়িত্বশীলতার সাথে পদক্ষেপ নিতে চাই। আমাদেরও এই বোমা তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে। 

তবে আমরা গত ১৫ থেকে ২০ বছরেও এর পরীক্ষা চালাই নি। ভারতের পরীক্ষার পরে আমাদেরও যে পরীক্ষা চালাতে হবে এমন তাড়াহুড়ো আমরা করছি না। তবে এদিকে পাকিস্তানের মন্ত্রী পরিষদের লোকেরা অনেকেই মনে করেন তাদেরও একটি পাল্টা পরীক্ষা চালানো উচিত। এবং এর পক্ষে তাদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছিল। আর সে সময় পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান পরিচালক সামার মোবারক মান্দ দেশের বাহিরে ছিলেন।

 আর তখন প্রধানমন্ত্রীর নেওয়াজ শরীফ এর সঙ্গে তাকে দেখা করতে বলা হলো। দেখা হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ প্রথমেই জানতে চাইলেন মোবারক মান্দের এ ব্যাপারে মতামত কি? মোবারক মান্দ মনে করেন যেহেতু ভারত একটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী যা বক্তব্য দিয়েছে তাতে  উপমহাদেশে পাকিস্তানের জন্য নিরাপত্তা নয়।

 কিন্তু পারমাণবিক পরীক্ষা চালালে পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নিষেধাজ্ঞা হওয়ার কথা জানান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের মন্ত্রী পরিষদে অনেক আলোচনা হয়। তাদের দেশের অধিকাংশ মতামতই ছিল পারমানবিক বোমা পরীক্ষা  চালানোর পক্ষে। এরপর এ  পরীক্ষা চালানোর জন্য  নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করা হয় বেলুচিস্তানের চাগি পর্বতমালায়।

  আর এর পরেই ডাঃ মোবারক মান্দ এবং তার সহযোগীরা যে স্থানে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হবে উক্ত স্থানে নানা রকমের সরঞ্জাম এবং লোকজন পাঠালেন। সকল কাজ করা হয় খুবই গোপনে। ততদিনে পাকিস্তানের ওপর পশ্চিমা দেশগুলো খুবই চাপ সৃষ্টি করেছিল। এবং বলেছিল যে পরমাণু পরীক্ষা চালালে তাদের ওপর আরও বিভিন্ন প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে সে ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার কোন কান দিলেন না। 

পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা পরীক্ষা

 
২৭ মে ১৯৯৮ ডাঃ মোবারক মান্দ তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা সরঞ্জাম গুলো সঠিক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তা বারবার পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এবং পরেরদিন পরীক্ষাটা চালানো হবে। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর খুবই নজর রেখেছিল। এবং সে রাতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ফোন করেন এবং এ পরীক্ষা চালাতে নিষেধ করেন। কিন্তু তা কান না দিয়ে ২৮ শে মে সকালে পরিক্ষার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেন পাকিস্তান।



 সেদিন ছিল প্রচুর রৌদ্রোজ্জ্বল ছিলন বাতাস। আর এ কারণে তেজস্ক্রিয় বেশি ছড়াতে পারবেনা। এরপর নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে  বিস্ফোরক স্থল হতে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার দুরুত্বে অবস্থান ডাঃ মোবারক মান্দ এবং তার সহকর্মীরা। এবং সেদিন দুপুর ৩টার সময় এক ইঞ্জিনিয়ার যে বোমাটি তৈরি করেছিল সে বাটন চাপেন। বাটন চাপার  ৩২ সেকেন্ড পর পাহাড়টি বিধ্বস্ত হতে শুরু করে। এবং পাহাড়টি  অবশেষে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার জুড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

 আর এভাবেই পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা তৈরীর যাত্রা শুরু হয়। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ সংবাদ সম্মেলনে জানান। এবং তাতে বিশ্বের অন্য সকল রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রতি নিন্দা জানায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ